OrdinaryITPostAd

শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের জীবনী

উত্তর বঙ্গের শ্রেষ্ঠ নেতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তবন্ধু শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান(হেনা)-র জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন। 

এ এইচ এম কামারুজ্জামানের পূর্ণ নাম হচ্ছে -আবুল হাসানাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান হেনা। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতার অন্যতম।তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন। একজন সৎ-নির্লোভ ও দেশপ্রেমী নেতা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন তিনি। 


সূচিপত্রঃ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের জীবনী


কামারুজ্জামানের জন্ম পরিচয় 

শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ১৯২৬ সালের ২৬শে জুন নাটোর জেলার বাগাতিপাড়ার মালঞ্চি রেলস্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে তার মামার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পৈত্রিক বাড়ি রাজশাহী জেলার কাদিরগন্জ মহল্লায়। তিনি বনেদি জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন। 

তার পিতা আব্দুল হামিদ ও মাতা বেগম জেবুন নেসা।তার বারো ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম সন্তান। তার ডাক ছিলো হেনা।১৯৫১ সালে কামারুজ্জামান জাহানারা জামান সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন।

কামারুজ্জামানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা 

এ এইচ কামারুজ্জামান লেখাপড়া শুরু করেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে। এবং পরবর্তীতে তার ফুপার সাথে চট্টগ্রামে গিয়ে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হোন।সেখান থেকে তিনি ১৯৪২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন।এরপর রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।

তিনি এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় যান।এবং কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স পাশ করেন।এরপর তিনি রাজশাহী আইন কলেজ হতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।১৯৫৬ সাল থেকে রাজশাহী জজকোর্ট থেকে আইন ব্যবসা শুরু করেন।

কামারুজ্জামানের সন্তান-সন্তদী

কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান দম্পতির কোল আলো করে জন্ম নেয় তাদের ছয় সন্তান। তাদের প্রথম সন্তান এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। যিনি বর্তমানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।কামারুজ্জামানের মেজোছেলে এ এইচ এম এহসানুজ্জামান স্বপন।পেশায় একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।কামারুজ্জামানের মেয়েদের নাম হচ্ছে-ফেরদোস মন্তাজ পলি,দিলারা জুম্মা রিয়া, রওশন আক্তার রুমি ও ছোট মেয়ে কবিতা সুলতানা চুমকি। 

কামারুজ্জামানের রাজনৈতিক পরিচয় 

শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ছিলেন একজন পারিবারিক ভাবে রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি।তার দাদা  হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার কংগ্রেস রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।তবে ওহাবী আন্দোলনের সাথেও তার সম্পৃক্ততা ছিল বলে জানা যায়।এ এইচ এম কামারুজ্জামান ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের রাজশাহী জেলা শাখার সম্পাদক ছিলেন।

১৯৪৩-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্রলীগের নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৬ সালে কামারুজ্জামান আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন।১৯৬২ ও১৯৬৫ সালে তিনি দুইবার  মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হোন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করেন। 

১৯৬৭ সালে তিনি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বিরোধী দলীয় উপনেতা নির্বাচিত হোন। আইয়ূব খান সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবি সমর্থনে ১৯৬৯ তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পুনরায় রাজশাহীতে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হোন। ১৯৭০ সালে সারাদেশে অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করতে থাকে। 

এমন সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাঁচজন সদস্য বিশিষ্ট দলীয় হাইকমান্ড গঠন করেন।এই হাইকমান্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন কামারুজ্জামান।১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল গঠিত হয় প্রথম অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার যা মুজিব সরকার নামে পরিচিত লাভ করে। এবং ১৭ই এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা বৈদ্যনাথ তলায় পরবর্তী মুজিব নগর সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। 

নব গঠিত মুজিব নগর সরকারের স্বরাষ্ট্র,কৃষি এবং ত্রাণ-পূনর্বাসন  মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন কামারুজ্জামান।১৯৭২ সালে মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এলে পুনরায় সরকার গঠিত হয়। সে সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত হোন কামারুজ্জামান।১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

 ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি রাজশাহীর দুটি সদর আসন তানোর ও গোদাগারী থেকে এমপি নির্বাচিত হোন। ১৯৭৪ সালের ১৮ই জানুয়ারি তিনি মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। এই সময় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হোন।

১৯৭৫ সালের নতুন মন্ত্রী সভায় তিনি শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।এসময় শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ (বাকশাল) গঠন করলে তিনি বাকশালে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হোন। 

কামারুজ্জামানের মৃত্যু দিন 

১৯৭৫ সালে ১৫ই আগষ্ট কিছু বিপদগামী সেনা কর্মকতার হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে,ঐ সময় কামারুজ্জামান সহ আরও তিন নেতাকে গ্রেফতার ও কারাবন্দী করা হয়।ঐ বছরেরই ৩রা নভেম্বর ভোর সারে চারটায় উক্ত কারাগারের অভ্যন্তরে তাকে সহ আরও তিন নেতাকে কিছু সেনা সদস্যরা নির্মম ভাবে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। 

তার শরীরের পোস্ট মর্ডাম রিপোর্টে বলা হয়,তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম পাওয়া যায় এবং বিশেষ করে ডানদিকের পাঁজরে এবং ডান হাতের কনুইতে বড় রকমের ক্ষত চিন্হ পাওয়া যায়। তার লাশ পরবর্তীতে রাজশাহীতে নিয়ে এসে কাদীরগন্জে তার পৈত্রিক কবরস্থানে দাফন  করা হয়। 

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪